বিজয়নগর প্রতিনিধি
“আমি রাত আনুমানিক ১০ টায় পড়ার টেবিলেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। হঠাৎ শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার সামনে দা, ছুরি নিয়ে দাড়ানো মোস্তফা ও শহিদ মিয়া। তারা আমাকে গলায় ছুরি ধরে টেনে-হিঁচড়ে মুখ চেপে ধরে বিছানায় নিয়ে ধর্ষণ করে একজনের পরে একজন” এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মাধবপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ধর্মঘর ইউনিয়নের বঙ্গবীর ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির মানবিক শাখার এক শিক্ষার্থী। এ ব্যাপারে গত ১৯ জুন ২০১৯ তারিখে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ২৬।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ই জুন ২০১৯ তারিখে রাত আনুমানিক ১১ ঘটিকার সময় মাধবপুর উপজেলার ১ নং ধর্মঘর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মোঃ শাহ আলম এর বাড়িতে একেই গ্রামের মোঃ ওয়াদ আলীর ছেলে মোঃ শাহিদ মিয়া (৪৫) ও পাশ্ববর্তী গ্রাম রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আঃ রহমান এর ছেলে মোস্তফা (৩৫) শাহ আলমের পশ্চিম ভিটে মাটির ঘরের জানালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে ঘুমন্ত স্কুল পড়–য়া ছাত্রীকে দা, ছুরির ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষন করে। এসময় বাহিরে আরো লোকের শব্দ শুনতে পায়। পালাক্রমে একাধিকবার ধর্ষনের পরে একই ঘরের পাশে রুমে ভিকটিমের ছোট বোন একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে শাহিদ মিয়া ও মোস্তফা ধর্ষণের জন্য এগিয়ে গেলে ভিকটিম অনুরোধ করে বলেন “যত পারে আমার উপর নির্যাতন কর,তারপরও আমার বোনকে নষ্ট করো না “। তার এই অনুরোধে তাকে আবারো দুইজনে ধর্ষণ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে তার ছোট বোনকে মোস্তফা সাথে বিয়ে দিতে। আর যেন কারো কাছে এই ঘটনা প্রকাশ না করে। প্রকাশ করলে পুরো পরিবারকে প্রাণনাশে হুমকী দিয়ে চলে যায়। এই ঘটনার পরে পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে মোস্তফা ও শাহিদ মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এখন ভিকটিমের পরিবার ও তার আত্মীয়-স্বজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এই বিষয়ে আপোষ মিমাংসা ও বাড়াবাড়ি না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেছে বলে ভিকটিমের মা নাছিমা বেগম (৩৫) জানান। তিনি আরো বলেন তার ছোট মেয়েকে একাধিক বিবাহিত মোস্তফার সাথে বিয়ে দেওয়া জন্য মোস্তফা বাড়িতে এসে অনেকবার চাপ প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হয়নি। মোস্তফাকে আমাদের বাড়ির আশেপাশে আসতেও নিষেধ করেছিলাম। সেই ক্ষোভ থেকে সে শাহিদ ও অন্যান্যদেরকে নিয়ে আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছে। আমি তার সর্বোচ্চ বিচারের দাবী করছি।
ভিকটিমের মামা আবুল কাশেম বলেন, আমি আমার ভাগনি ও বোনের কাছে শুনছি আমার ছোট ভাগনীকে একাধিক বিবাহিত বখাটে মোস্তফা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় তাকে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে সুযোগ বুঝে এমন জঘন্যতম কাজটি করেছে। এখন মোস্তফা ও শাহিদ মিয়ার পক্ষে তার আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের কিছু নষ্ট প্রকৃতির প্রভাবশালী মানুষ আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিচারকে প্রভাবিত করার পায়তারা করতেছে।
বঙ্গবীর ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক আহাম্মেদ বলেন, আমার স্কুলের ৯ম ও ১০ম শ্রেনীর আপন দুই বোনের সাথে এমন সমাজের অবক্ষয় এর মত জঘন্য ঘটনার খবর মেয়ে গুলোর অভিভাবক আমাকে অবহিত করেছে। আমি তাদের আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি। আমার স্কুলের পক্ষ থেকে একটি মানবন্ধন করার চিন্তা করেছি। আমরা এটার সঠিক বিচার দাবী করছি। যাতে করে এমন ঘটনা আর আমাদের সমাজে না ঘটে সেটাই প্রত্যাশা করি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply